Nelson mandela biography pdf in bengali style
নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (জোজা উচ্চারণ: [xoˈliːɬaɬamanˈdeːla]; ১৮ জুলাই ১৯১৮ - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩)[১] ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকারবর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশটির প্রথম কৃষাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের ধারক ম্যান্ডেলা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ম্যান্ডেলা ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি উপনিবেশ-বিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন। এর অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপ, পলসমুর কারাগার ও ভিক্টর ভার্স্টার কারাগারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চপের মুখে এবং বর্ণবাদী গৃহযুদ্ধের আতঙ্কে রাষ্ট্রপতি এফ.
ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি তাকে কারামুক্ত করার নির্দেশ দেন। কারামুক্তি লাভের পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে বর্ণবাদ নিপাতের প্রচেষ্টায় শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ম্যান্ডেলা তার দল এএনসি'র হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়লাভ করে রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভারত সরকার প্রদত্ত ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতরত্ন পুরস্কার ও ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার।[২] তাছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেক পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তার গোত্রের নিকট মাদিবা নামে পরিচিত, যার অর্থ হল "জাতির জনক"।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
[সম্পাদনা]নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন কেপ প্রদেশের থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় উমতাতার নিকটবর্তী ম্ভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার নামের মধ্যাংশ রোলিহ্লাহ্লা একটি খোসা ভাষার শব্দ, যার অর্থ "সমস্যা সৃষ্টিকারী"; তার জীবনের শেষভাগে তিনি তার বংশের নাম "মাদিবা" হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন। তার প্রপিতামহ নগুবেংচুকা (মৃত্যু ১৮৩২) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান পূর্ব কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর ইনকোসি এনখুলু অর্থাৎ রাজা।[৭] এই রাজার এক পুত্র ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার পিতামহ। নেলসনের বংশগত নাম ম্যান্ডেলাই এই পিতামহ থেকেই পাওয়া। তবে নেলসনের পিতামহী ইক্সহিবা গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তার ক্যাডেট শাখার বংশধরদের কেউ থেম্বু রাজবংশে আরোহণ করার অধিকার রাখেন না, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্র রাজকীয় উপদেষ্টা হয়ে থাকেন।
ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা ম্যান্ডেলা (১৮৮০-১৯২৮) ম্ভেজো গ্রামের মোড়ল ও শাসকের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একজন শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক তার পূর্ববর্তী পদাধিকারী দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হলে তিনি ১৯১৫ সালে এই পদে আসীন হন। ১৯২৬ সালে গাদলাও দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হন, তবে ম্যান্ডেলাকে বলা হয়েছিল যে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগভাজন হওয়ায় ও ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তার পিতাকে পদচ্যুত হয়েছিলেন। তিনি তখন তার পরিবারসহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পদচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও গাদলা ইনকোসিদের প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন এবং থেম্বুর শাসনকর্তা হিসাবে জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবোকে নির্বাচিত করায় ভূমিকা রাখেন।[১৩] গাদলা ছিলেন কাতামা দেবতার অনুসারী। তার চার স্ত্রী, চার পুত্র ও নয় কন্যা ছিল।[১৩] তারা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে বাস করতেন। ম্যান্ডেলার মাতা ছিলেন গাদলার তৃতীয় স্ত্রী নোসেকেনি ফ্যানি। ফ্যানি ছিলেন ম্পেম্ভু খোসা গোত্রের ন্কেদামার কন্যা।
শৈশব: ১৯১৮-১৯৩৪
[সম্পাদনা]আমার পরিবারের কেউ কখনো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি ...
বিদ্যালয়ের প্রথম দিন আমার শিক্ষিকা ম্দিঙ্গানে আমাদের প্রত্যেকের ইংরেজি নাম রাখেন। সে সময়ে আফ্রিকানদের মধ্যে এটি একটি রীতি ছিল এবং তা নিঃসন্দেহে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রিটিশ পক্ষপাতের কারণে। সেদিন ম্দিঙ্গানে আমাকে বলেন আমার নতুন নাম নেলসন। এই নামটিই কেন তা সম্পর্কে আমার কোন ধারণ নেই।
—ম্যান্ডেলা, ১৯৯৪
ম্যান্ডেলা পরবর্তী কালে বলেন যে তার প্রারম্ভিক জীবন ঐতিহ্যবাহী থেম্বু প্রথা ও নিষেধে জেলে আবদ্ধ ছিল। তার শৈশব কাটে তার দুই বোনের সাথে তার মাতামহের বাড়ি কুনু গ্রামে। তার পিতামাতা দুজনেই অশিক্ষিত ছিলেন। তার মাতা খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি ম্যান্ডেলার যখন সাত বছর বয়স, তখন তাকে স্থানীয় মেথডিস্ট বিদ্যালয়ে পাঠান। তিনি তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ম্যান্ডেলা রাজপ্রাসাদের কাছে একটি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। মেথডিস্ট হিসেবে অভিসিঞ্চিত ম্যান্ডেলাকে স্কুলে পড়ার সময়ে তার শিক্ষিকা ম্দিঙ্গানে তার ইংরেজি নাম রাখেন "নেলসন"। ম্যান্ডেলার বয়স যখন ৯ বছর, তখন তার পিতা কুনুতে আসেন। সেখানেই তিনি এক চিকিৎসার অযোগ্য এক রোগে মারা যান। ম্যান্ডেলার ধারণা তিনি যক্ষ্মা রোগে মারা গিয়েছিলেন। ম্যান্ডেলা পরবর্তী কালে বলেন তিনি বংশ পরম্পরা অনুযায়ী তার পিতার "বিদ্রোহচারণ" ও "পক্ষপাতহীনতার একগুঁয়ে জ্ঞান" লাভ করেছিলেন।
ম্যান্ডেলার পিতার মৃত্যুর পর তার মাতা তাকে মকেকেজেনিতে নিয়ে যান। সেখানে থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার গোত্রে বরণ করে নেওয়া হয়। থেম্বু শাসক জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবো তখন তার অভিভাবক নিযুক্ত হন।[১৩] এরপর অনেক বছর তিনি তার মাতাকে দেখেননি। জোঙ্গিন্তাবা ও তার স্ত্রী নোয়েঙ্গল্যান্ড তাকে তাদের নিজেদের সন্তানের মত স্নেহ করতেন এবং তাদের পুত্র জাস্টিস ও কন্যা নমাফুর সাথে লালনপালন করেন। ম্যান্ডেলা তার অভিভাবকদের সাথে প্রতি রবিবার গির্জায় যেতে, ফলে খ্রিস্টধর্ম তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। তিনি রাজপ্রাসাদের নিকটবর্তী মেথডিস্ট মিশন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি, খোসা, ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। রাজপ্রাসাদে আগত বয়োজ্যেষ্ঠ আগন্তুকদের নিকট থেকে গল্প শোনে আফ্রিকান ইতিহাস সম্পর্কে তার ভালোবাসা জন্মে এবং তিনি জোয়ি নামক একজন সাম্রাজ্যবিরোধী আগন্তুকের দ্বারা প্রভাবিত হন। সেই সময়ে তিনি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতাবাদীদের অত্যাচারী নয় বরং উপকারী মনে করতেন, কারণ তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসেছিল। ১৬ বছর বয়সে তিনি, জাস্টিস ও আরও কয়েকজন বালক তিহালার্হায় উলওয়ালুকু খতনা করতে যান। এই প্রথাকে বালক থেকে প্রাপ্ত বয়স্কে রূপান্তরের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। এরপর ম্যান্ডেলার নামকরণ করা হয় দালিবুঙ্গা।
ক্লার্কবারি, হেল্ডটাউন ও ফোর্ট হেয়ার: ১৯৩৪-১৯৪০
[সম্পাদনা]থেম্বু রাজদরবারের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৩৩ সালে ম্যান্ডেলা এঙ্গকোবোর ক্লার্কবারি মেথডিস্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হন। পশ্চিমা-ধারার এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জন্য থেম্বুল্যান্ডের সর্ববৃহৎ বিদ্যালয়।[২৮] সেখানে ম্যান্ডেলা ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন।[২৮] ১৯৩৭ সালে ম্যান্ডেলা ফোর্ট বোফোর্ট শহরের মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হন। জাস্টিসসহ থেম্বু রাজপরিবারের অধিকাংশ সদস্য এখানেই পড়াশোনা করত। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইংরেজি সংস্কৃতি ও সরকারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতেন, কিন্তু ম্যান্ডেলা স্থানীয় আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। এইখানের তার প্রথম খোসা বংশের বাইরের কারও সাথে বন্ধুত্ব হয়, যে সতো ভাষী ছিল। এছাড়া এখানে তিনি তার প্রিয় একজন শিক্ষকের দ্বারা প্রভাবিত হন, যিনি খোসা বংশীয় হয়েও একজন সতোকে বিয়ে করে এই রীতি ভেঙ্গে দেয়। ম্যান্ডেলা হেল্ডটাউনে থাকাকালীন অবসর সময়ে দৌড় ও মুষ্টিযুদ্ধের মতো খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন।
জোঙ্গিন্তাবার সহায়তায় বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস কোর্সে ভর্তি হন। ফোর্ট হেয়ার হল পূর্ব কেপের অ্যালিসে অবস্থিত কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য একটি অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ১৫০ জনের মত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে তিনি ইংরেজি, নৃতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, স্থানীয় প্রশাসন, ও রোমান ওলন্দাজ আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তার লক্ষ্য ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুবাদক বা কেরানি হওয়া। ম্যান্ডেলা ওয়েসলি হাউজ ছাত্রাবাসে থাকতেন এবং এখানেই তার নিজের গোত্রীয় কে.
ডি.
Pinel philippe history sampleমাটানজিমা এবং অলিভার টাম্বোর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। টাম্বো আর ম্যান্ডেলা আজীবন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং পরবর্তী দশকে কমরেড হন। অন্যদিকে কাইজার (কে ডি) মাটানজিমা ছিলেন ট্রান্সকেইয়ের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। এই বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা বান্টুস্থানের রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে জড়িত হন। তবে এসব নীতিমালার ক্ষেত্রে ম্যান্ডেলা ও মাটানজিমার মতবিরোধ হয়।
ম্যান্ডেলা বলরুম নৃত্য শিখেন, এবং নাট্য সংঘের মঞ্চস্থ আব্রাহাম লিঙ্কন সম্পর্কিত একটি নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি স্টুডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের অংশ হিসেবে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বাইবেল শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। যদিও তার বন্ধুরা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে জড়িত ছিলেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা চাইতেন, ম্যান্ডেলা সাম্রাজ্য-বিরোধী আন্দোলনের সাথে সহাবস্থান এড়িয়ে চলতেন, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ব্রিটিশদের যুদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতি মৌখিক সমর্থন জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শেষে ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সংসদের ডাকা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। এর ফলে ফোর্ট হেয়ার তাকে চলে যেতে বলা হয়। শর্ত দেওয়া হয়, কেবল ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সদস্য হতে পারলেই তিনি সেখানে ফেরত আসতে পারবেন।[৪৩] কিন্তু তিনি তার ডিগ্রি অর্জনের জন্য আর ফিরে আসেননি।
জোহানেসবার্গে আগমন: ১৯৪১-১৯৪৩
[সম্পাদনা]ম্যান্ডেলা ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে ফোর্ট হেয়ার ছাড়ার অল্প পরেই জানতে পারেন, জোঙ্গিন্তাবা তার সন্তান জাস্টিস (যুবরাজ ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী) এবং ম্যান্ডেলার বিয়ে ঠিক করার ঘোষণা দিয়েছেন। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলেননা। তাই তারা দুজন কুইন্সটাউন হয়ে জোহানেসবার্গে চলে যান।[৪৫] তারা ১৯৪১ সালের এপ্রিলে জোহানেসবার্গে পৌঁছান। সেখানে ম্যান্ডেলা শুরুতে একটি খনিতে প্রহরী হিসেবে কাজ নেন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার পুঁজিবাদী কার্যক্রম দেখতে পান। তবে অল্পদিন পরেই খনির মালিক ইদুনা জেনে যান যে, ম্যান্ডেলা বিয়ে এড়াতে জোঙ্গিন্তাবার কাছ থেকে পালিয়ে এসেছেন। এটা জানার পর খনি কর্তৃপক্ষ ম্যান্ডেলাকে ছাঁটাই করেন। তিনি তার এক আত্মীয়ের সাথে জর্জ গচ টাউনশিপে থাকা শুরু করেন, যিনি তাকে স্থাবর সম্পত্তি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের কর্মী ওয়াল্টার সিসুলুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। সিসুলু ম্যান্ডেলাকে ইহুদি উদারপন্থী ল্যাজার সিডেল্স্কি পরিচালিত জোহানেসবার্গের আইনি প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেল্স্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসেবে চাকুরি পেতে সহায়তা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে তিনি গৌর রাডেবে এবং নাট্য ব্রেগম্যানের সাথে পরিচিত হন। রাডেবে ছিলেন এএনসি ও কমিউনিস্ট পার্টির খোসা সদস্য এবং ব্রেগম্যান ছিলেন একজন ইহুদি কমিউনিস্ট, যিনি ম্যান্ডেলার প্রথম শ্বেতাঙ্গ বন্ধু। ম্যান্ডেলা কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন, যেখানে তিনি ইউরোপীয়, আফ্রিকান, ভারতীয় ও বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের সম-মিশ্রণ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি পরবর্তী কালে বলেন তিনি এই দলে যোগ দেননি কারণ এই দলের নাস্তিক্যবাদ তার খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তিনি মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামের মূল কারণ বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিভিত্তিক দ্বন্দ্ব নয়। এই সময়ে ম্যান্ডেলা তার উচ্চ শিক্ষা চালু রাখার জন্য ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের ভর্তি হন।
স্বল্প পারিশ্রমিকে চাকরি করা ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের উত্তরের দিকের শহর আলেক্সান্দ্রাতে এক খোমা পরিবারের বাড়িতে একটি কক্ষে বাস করতেন। দারিদ্রে জর্জরিত এবং অপরাধ ও দূষণেরঙ্গেই শহরটি ম্যান্ডেলার মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। দারিদ্রপীড়িত হওয়া স্বত্বেও অল্প কিছুদিনের জন্য একজন সোয়াজি তরুণীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। অর্থ সঞ্চয় ও জোহানেসবার্গের নিকটে থাকার লক্ষ্যে তিনি ভিটভাটারস্র্যান্টে নেটিভ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন গোত্রের খনিকর্মীদের সাথে বসবাস শুরু করেন। এই প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রধান ব্যক্তিবর্গ আসতেন, এরই ফলে তিনি একবার বসতোল্যান্ডের রানীর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ১৯৪১ সালের শেষভাগে জোঙ্গিতাবা জোহানেসবার্গে আসেন এবং থেম্বুল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পূর্বে তিনি ম্যান্ডেলাকে পালিয়ে আসার জন্য ক্ষমা করে দেন। থেম্বুল্যান্ডে যাওয়ার পর ১৯৪২ সালের শীতকালে তিনি মারা যান। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস শেষকৃত্যের একদিন পরে সেখানে পৌঁছান। ১৯৪৩ সালের শুরুতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গে ফিরে আসেন এবং থেম্বুল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার পরিবর্তে আইনজীবী হিসেবে তার রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করেন। তিনি এই প্রসঙ্গে পরবর্তী কালে বলেন যে তিনি কোন আগমন বার্তা পাননি, কিন্তু তিনি নিজেকে এই কাজ জড়িয়ে ফেলেন এবং অন্য কিছু করতে পারতেন না বলে মনে করেন।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
[সম্পাদনা]আইন অধ্যয়ন ও এএনসি ইয়ুথ লিগ: ১৯৪৩-১৯৪৯
[সম্পাদনা]ম্যান্ডেলা ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। এখানে তিনিই একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বর্ণবাদের শিকার হন। এখানে উদারপন্থী ও কমিউনিস্ট ইউরোপীয়, ইহুদি ও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন জো স্লোভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফার্স্ট। পরবর্তী কালে এই বন্ধুরা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশ নেন। রাজনীতির সাথে অধিকতর সম্পৃক্ত হয়ে ম্যান্ডেলা ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘটে যোগ দেন। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াল্টার সিসুলুর দ্বারা প্রভাবিত হন এবং তার পুরনো বন্ধু অলিভার টাম্বোসহ অন্যান্য সক্রিয় কর্মীদের নিয়ে সিসুলুর ওরল্যান্ডোর বাড়িতে সময় কাটাতেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের "আফ্রিকানিস্ট" শাখার সাথে সম্পৃক্ত এএনসির সদস্য অ্যান্টন লেম্বেডের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ উপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বা কমিউনিস্টদের সাথে সম্পৃক্ততার ঘোর বিরোধী ছিল। কৃষ্ণাঙ্গের বাইরে ও কমিউনিস্টদের সাথে তার বন্ধুত্ব থাকা স্বত্ত্বেও ম্যান্ডেলা লেম্বেডের মতাদর্শকে গ্রহণ করেন এবং মনে করেন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের পুরোপুরিভাবে স্বাধীন হতে হবে। তাদের বশ্যতা স্বীকারের বিপরীতে আফ্রিকানদের গণ-আন্দোলনের জন্য তরুণ শাখার গুরুত্ব অনুধাবণ করে এএনসির সভাপতি আলফ্রেড বিটিনি জুমার সাথে আলোচনা করতে ম্যান্ডেলা একটি প্রতিনিধি দলের সাথে জুমার সোফিয়াটাউনের বাড়িতে যান। ১৯৪৪ সালের পুণ্য রবিবারেবান্টু মেন্স সোশ্যাল সেন্টারেআফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হন লেম্বেড এবং ম্যান্ডেলা এই দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন।
সিসুলুর বাড়িতে ম্যান্ডেলা ইভলিন মেসের সাথে পরিচিত হন। মেস ছিলেন প্রশিক্ষণাধীন নার্স ও এএনসি কর্মী। তিনি ট্রান্সকেইয়েরএংকোবোর থেকে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে অচিরেই সম্পর্ক তৈরি হয় এবং ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শুরুতে তারা মেসের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। পরে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের গোড়ার দিকে অরল্যান্ডো শহরে একটি ভাড়া বাড়িতে চলে যান। তাদের প্রথম সন্তান, মাদিবা "থেম্বি" থেম্বেকিলে, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করে। এরপর ১৯৪৭ সালে তাদের কন্যা, মাকাজিউই, জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র নয় মাস বয়সে মারা যায়। ম্যান্ডেলা তার মাতা ও বোন লিবিকে তার সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ম্যান্ডেলা অসুস্থ লেম্বেডকে দেখতে হাসপাতালে যান। লেম্বেড সেখানে মারা যান। ম্যান্ডেলা এএনসি ইয়ুথ লিগের সভাপতি হন। পিটার ম্দা কমিউনিস্ট ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যতীত অন্যদের সাথে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ম্যান্ডেলা ম্দার এই প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানান এবং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এএনসি ইয়ুথ লিগ থেকে কমিউনিস্টদের বহিষ্কার করার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। তার মতে কমিউনিস্টদের মতাদর্শ ছিল অ-আফ্রিকান। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসির ট্রান্সভাল প্রদেশ শাখার নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত হন এবং আঞ্চলিক সভাপতি সি.
এস. রামোহানোর অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। যখন রামোহানো কমিটির বিরুদ্ধে গিয়ে ভারতীয় ও কমিউনিস্টদের সহযোগিতার ইচ্ছাপোষণ করেন, তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা সদস্যদের মধ্যে ম্যান্ডেলা অন্যতম ছিলেন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ নির্বাচনে কেবল শ্বেতাঙ্গদের ভোট দেওয়ার অনুমতি ছিল। দানিয়েল ফ্রঁসোয়া মালানের নেতৃত্বে আফ্রিকানদের নিয়ন্ত্রিত হেরেনিজ নাসিওনালে পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করে। তারা আফ্রিকানার পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে ন্যাশনাল পার্টি গঠন করে। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার পক্ষপাতী ছিল।[৭১] ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এই সম্মেলনে মুক্তি সনদ প্রণয়ন করা হয়, যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি।[৭৩][৭৪] এএসনিতে ম্যান্ডেলার প্রভাব আরও বাড়তে থাকলে তিনি ও তার দলের সদস্যরা সরাসরি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় হয়ে পড়েন। সেই কার্যাবলির মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় সম্পদ্রায়ের কৌশল অনুসারে বর্জন ও ধর্মঘট ডাকা। জুমা এইসব কার্যক্রমকে সমর্থন দেননি এবং তাকে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। জেমস মরোকা তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং বিপ্লবী নির্বাহী সদস্য হিসেবে যুক্ত হন সিসুলু, ম্দা, ট্যাম্বো, ও গডফ্রি পিটজে। এই সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠায় ম্যান্ডেলা তৃতীয় বারের মত ভিটভাটারস্র্যান্টে শেষ বর্ষে অকৃতকার্য হন। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেন।
প্রকাশ্যে বিরোধিতা ও এএনসির সভাপতিত্ব: ১৯৫০-১৯৫৪
[সম্পাদনা]ম্যান্ডেলা ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর জাতীয় নির্বাহী হিসেবে জুমার স্থলাভিষিক্ত হন, এবং একই বছর এএনসির যুব লীগের জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। মার্চ মাসে জোহানেসবার্গে মুক্ত আলোচনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আফ্রিকান, ভারতীয় ও কমিউনিস্ট কর্মীরা একত্রিত হয়ে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ও শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যালঘু আইনের বিরুদ্ধে মে দিবসের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ম্যান্ডেলা এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করেন, কারণ এটি বিভিন্ন উপজাতির সংমিশ্রণে ডাকা এবং এএনসির নেতৃত্বে ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকেরা এতে অংশ নেয়, ফলে পুলিশি দমন-পীড়ন বেড়ে যায় এবং সকল প্রকার বিপ্লবী দলকে প্রতিহত করতে কমিউনিজম দমন আইন, ১৯৫০ চালু করা হয়। ১৯৫১ সালে এএনসির জাতীয় সম্মেলনে তিনি জাতিগত সম্মিলিত দল গঠনের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করেন, তবুও সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
এরপর ম্যান্ডেলা লেম্বেডের আফ্রিকানবাদের ধারণা বাতিল করেন এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বহু-উপজাতীয় দলের ধারণাটি গ্রহণ করেন। তার বন্ধু মোজেস কোটানে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন থেকে অনুপ্রাণিত হয়, কমিউনিজমের প্রতি তার ভুল ধারণা ভাঙ্গে এবং তিনি কার্ল মার্ক্স, ভ্লাদিমির লেনিন, ও মাও জেদঙের রচনাবলি পড়তে শুরু করেন। ফলে তিনি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের জন্য মার্ক্সবাদী দর্শন গ্রহণ করেন। কমিউনিজম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি পরবর্তী কালে বলেন শ্রেণিহীন সমাজের ধারণাটি তাকে আকৃষ্ট করে, যা তার কাছে ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান সংস্কৃতির সমতুল্য বলে মনে হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ম্যান্ডেলা এইচ.এম.
ব্যাজনার ল ফার্মে কাজ শুরু করেন, যার মালিক ছিলেন একজন কমিউনিস্ট। কাজের প্রতি তার দায়িত্ববোধ ও রাজনৈতিক কার্যাবলির কারণে তিনি তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারতেন না।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এএনসি ভারতীয় ও কমিউনিস্টদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রকাশ্যে বিরোধিতার প্রস্তুতি নেয়, এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের লক্ষ্যে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বোর্ড গঠন করে। এই আন্দোলনের মূলত মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিল। কয়েকজন এই দর্শনকে নৈতিক বিবেচনায় সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু ম্যান্ডেলা এই দর্শনকে প্রায়োগিক বলে গণ্য করেন।[৮৮] ২২শে জুন ডারবানে এক মিছিলে ম্যান্ডেলা ১০,০০০ লোকের এক সমাবেশ সহযোগে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং অল্প সময়ের জন্য মার্শাল স্কয়ার কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এই সকল কার্যাবলি ম্যান্ডেলাকে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে খ্যাতি পাইয়ে দেয়। আরও বিক্ষোভের পর এএনসির সদস্য ২০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়। সরকার গণ-গ্রেফতার শুরু করে এবং মার্শাল আইন জারি অনুমতি সাপেক্ষে জন-নিরাপত্তা আইন, ১৯৫৩ চালু করে। মে মাসে কর্তৃপক্ষ ট্রান্সভাল এএনসির সভাপতি জে.
বি.
Bradstreet anne biographyমার্কসের জনসম্মুখে উপস্থিতি নিষিদ্ধ করে দেয়। তার পদে থেকে কাজ বজায় রাখতে না পারায় তিনি ম্যান্ডেলাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে সুপারিশ করেন। আফ্রিকানপন্থীরা তার প্রার্থিতার বিরোধিতা করলেও ম্যান্ডেলা অক্টোবরে অঞ্চলিক সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।